কামাল কাকুরা কাঁদতে জানে না
ইসরাফিল হোসাইন
———————
কামাল কাকাকে হাসতে দেখেছি সারাজীবন,
কাঁদতে দেখি নি কোনদিন!
কামাল কাকুরা কাঁদতে ভুলে গেছে জীবনেরই প্রয়োজননে।
আমাদের গ্রামের মুন্সিবাড়ির কামাল কাকুর সাথে
হঠাৎ দেখা পথের মাঝে এই সেদিন–
বরাবরের মতোই হেসে বললো-
“কেমন আছ বাজান?”
গ্রামের মেঠোপথে হাটতে হাটতে
কামাল কাকু বললো-
“ধানখেতের মাঝখানে যে সরু আইলটি আছে,
এই পথেই বাপের বাড়ি যেতেন তোমার মা!
আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো
পাটের শাড়িপরা মায়ের মলিন মুখখানি।
বেতেরঝুরি-হাতে হেটে যাওয়া এই পথটিই ছিল
মায়ের স্বামীর বাড়ি আর বাপের বাড়ির মিলনসেতু।
বিস্তীর্ণ ধানের খেতের মাঝখানের এই সরু পথটি ছাড়া অন্য কোন পথে হেটেছেন কি না মা–
আমার খুব একটা মনে পড়ে না।
মায়েদের চাওয়া-পাওয়া গুলো খুবই সীমিত,
মায়েদের উদারতাগুলো সবুজের মতোই প্রসারিত।
কামাল কাকুর মতো আমার মাকেও
কাঁদতে দেখি নি কোনদিন!
সংসারের ঘানি টেনে ক্লান্ত আমার মা
কমৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগেও হেসেছেন।
কামাল কাকুর সাথে হাটতে হাটতে
গ্রামের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে থমকে দাঁড়াই!
শেষপ্রান্তের খালটি আজ শুকিয়ে গেছে।
একসময় এই খালে পালতোলা নৌকা ভিড়লে
বাঁধা হতো হিজলগাছে,
ধান আর পাট বোঝাই করে দাঁড়টানা নৌকাগুলো
পাল তুলে চলে যেতো অজানার পথে,
বৈশাখ মাসে রঙিন পুঁঠির ঝাঁক এসে
লাফাতো জমিতে।
গ্রামের ঐ শুকনো খালের মতো
কামাল কাকুদের কান্নাগুলোও মরে গেছে সেই কবে!
সেই কান্নায় শত নদী বয়ে চলে নীরবে–।
কামাল কাকুদের হাসির ভাষা
কজনইবা বুঝতে পারি?
কামাল কাকুরা হাসছে বলেই–
আমরা নির্বিঘ্নে– কাঁদতে পারি!!