বধ্যভূমির মেয়ে হিসেবে পরিচিত কবি ড. সেলিনা রশিদ দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে ঘুরে বেড়ান। সেই সুবাদে তিনি আসেন তার নিজ জেলা গাজীপুর এর বাড়িয়া বধ্যভূমিতে। ড. সেলিনা রশিদ ছোট বেলায় ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গণহত্যায় তার বাবাকে হারান। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিনের আর খোঁজ মিলেনি। পরবর্তীতে সেলিনা ও তার মা বিভিন্ন স্থানে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিনের খোঁজ করেন। কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পাননি। এমনকি উপজেলায় শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ও নাম পাননি। সেলিনা রশিদ মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন দেশের কোনো না কোনো বধ্যভূমিতে ও গণহত্যার ইতিহাসে হয়তো তার বাবার অস্তিত্ব রয়েছে। সেই থেকে সেলিনার যাত্রা শুরু। আজ সেলিনা রশিদের বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। কিন্তু বাবার শেষ অস্তিত্ব টুকু খুঁজে বের করতে তিনি ছুটে চলেছেন ১৯৭১ এর গণহত্যার ইতিহাস সংগ্রহ করতে বিভিন্ন বধ্যভূমিতে। সংগ্রহ করে আনছেন গণহত্যার লোমহর্ষক সেই সকল ঘটনা আর বধ্যভূমি গুলোর শহীদের রক্তে ভেজা মাটি। সেই মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা। দিন শেষে এই মাটির ঘ্রাণে তিনি নিজ বাবার অস্তিত্ব খুঁজে পান।
সেলিনা রশিদ তার বাবার অস্তিত্বকে খুঁজতে চলে যান বাড়িয়া বধ্যভূমিতে। সেখানে গিয়ে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং বাড়িয়া বধ্যভূমি সম্পর্কে তিনি যা বলেন-
মহান মুক্তিযুদ্ধে গাজীপুর সদর উপজেলার জেলার বাড়িয়া গণহত্যা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ১৪ মে গাজীপুরের বাড়িয়া এলাকায় জঘন্যতম এক গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি নরপশুরা। দুপুর ১টার দিকে ভাওয়াল এস্টেটের সেনানিবাস থেকে প্রায় ৫০০ পাকিস্তানি সৈন্য বারিয়ায় পৌঁছায়। তিন দিকে বেলাই বিল বেষ্টিত বাড়িয়া গণহত্যায় কতজন মানুষ শহীদ হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, দুই শতাধিক বাঙালিকে এদিন হত্যা করা হয়। গণহত্যা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি পাকিস্তানি সেনারা।অপরাধীরা ঘরবাড়ি লুট করে এবং বেশিরভাগ বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। কিছু গ্রামবাসী বেলাই বিল পার হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। সৈন্যরা তাদের উপরও গুলি চালায়।পালিয়ে যাওয়া গ্রামবাসীদের জিনিসপত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা লুট করে নিয়ে যায়। সেনাবাহিনী বেলাই বিলের একটি জল পাম্পকে কামান ভেবে গুলি করে। সেখানে মাত্র ৪-৫ ঘণ্টা সময়ে তারা নিরস্ত্র অসংখ্য বাঙালি নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। হত্যার পর কারও কারও লাশ বেলাই বিলের জলে ভাসিয়ে দেয়। কারও লাশ আবার ডাঙায় ফেলে রাখে। সেগুলো শেয়াল-কুকুরে খেয়ে ফেলে।
নির্বিচারে গুলিবর্ষণে বারিয়া ও কামারিয়ার প্রায় ২০০ গ্রামবাসী নিহত হয়, যার মধ্যে মহিলা ও শিশুও ছিল। বন্দুকযুদ্ধে শত শত মানুষ আহত হয়।
সেলিনা রশিদ বাড়িয়া এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে বারিয়ার গণহত্যার ইতিহাস জানার চেষ্ঠা করেন এবং সর্বশেষ বাড়িয়া বধ্যভূমির রক্তে ভেজা মাটি তিনি তুলে আনেন।