সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে অব্যাহত বৃষ্টিপাতে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট দু’দফা বন্যায় প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে বিভিন্ন খাতে প্রাথমিকভাবে সর্বমোট ক্ষতি ধরা হয়েছে ৮৭ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৫০ টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কপথে। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। তবে ডুবন্ত সড়কগুলো থেকে পানি পুরোপরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের।
সাম্প্রতিককালে ঢলের পানিতে জগন্নাথপুরের গ্রামীণ সড়কগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। উপজেলার শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়ক, ভবেরবাজার-সৈয়দপুর-নয়াবন্দর-কাঁঠালখাই ও গোয়ালাবাজার সড়ক, পাটলির লাউতলা-রসুলগঞ্জ সড়ক, কলকলিয়া ইউনিয়নের কামারখাল-চণ্ডিঢর সড়ক, ইকড়ছই-চিলাউড়া সড়কসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যায়। বন্যায় এসব সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন বলেন, এ উপজেলার প্রায় ৯০০ কিলোমিটার সড়কপথের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার অংশ ধরা হয়েছে। ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১৫টি। যার আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
রাস্তাঘাটের পানি পুরোদমে নেমে গেলে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। অন্যদিকে, মৎস্য খাতে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও কৃষি খাতে ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, শস্যক্ষেত ও বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে কৃষি খাতে এ ক্ষতি হয়েছে।
একই সূত্রের তথ্যানুসারে, গবাদিপশু, পাখি, খড়-ঘাসসহ গৃহ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খাতে ৮৭ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোন টাওয়ার খাতে ক্ষতি ধরা হয়েছে ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নদী ও হাওরের বাঁধে আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৯৫ লাখ টাকার। তবে তা আরও অনেক অংশে বাড়বে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়াও জনস্বাস্থ্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুর রব সরকার বলেন, নলকূপ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন খাতে প্রাথমিকভাবে এ ক্ষতি ধরা হয়েছে। যা পরবর্তীতে আরও বাড়তে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দ্রুতই এ ক্ষতিপূরণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে কাজ করা হবে।
জগন্নাথপুরের ইউএনও আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার বিভিন্ন খাত ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর মিলিয়ে অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমরা ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক একটি তালিকা জেলার মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুতই ক্ষতিপূরণে কাজ শুরু হবে। উল্লেখ্য, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ১৮ই জুন থেকে এ উপজেলায় প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। আবার ১ই জুলাই থেকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।