ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো দুই জেলার কিছু এলাকায় মানুষ পানিবন্দী। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ফেনী: জেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি আজ শুক্রবার বিপৎসীমার ২৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে মুন্সিরহাট ইউনিয়ন ও আনন্দপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫০টি বন্যাদুর্গত পরিবারকে শুকনা খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। বিতরণের জন্য মজুত রয়েছে আরও ৫০০ প্যাকেট। এর বাইরে গতকাল জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ২ হাজর ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ হিসেবে চাল দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
পরশুরাম ইউএনও আফরোজা হাবিব বলেন, মুহুরী নদীতে পানির ঢল কমেছে। উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের মালি পাথর, পাগলির কূল, শালধর গ্রাম; বক্স মাহমুদ ইউনিয়নের বাগমারা, দক্ষিণ টেটেশ্বর, কহুয়া, তালবাড়ীয়া, চারিগ্রাম গ্রাম ও মির্জানগর ইউনিয়নের মনিপুর, গদানগর, দক্ষিণ কাউতলী গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৭০০টি পরিবার এখনো পানিবন্দী।
পরশুরাম উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলায় ৭৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়। বিতরণের জন্য আরও ১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৩০ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে।
নোয়াখালী: আজ সকালে সরেজমিনে শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সরকারি মহিলা কলেজ, হরিনারায়ণপুর, ফরিকরপুর, রশিদ কলোনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার অনেক বাড়িঘর ও সড়ক এখনো জলমগ্ন। জেলা জজ আদালত, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের প্রাঙ্গণেও পানি জমে আছে। শহরের পানিনিষ্কাশনের প্রধান খাল ছাগল মারা খালের পৌর বাজার, বিশ্বনাথ, হরিনারায়ণপুর, রশিদ কলোনি এলাকায় পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। পানিনিষ্কাশন হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে।
লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার দরগা বাড়ির বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, পাঁচ দিন ধরে তাঁরা পানিবন্দী। শিশুদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। অসুস্থ লোকেরাও বেশ বিপদে আছেন। তাঁদের ঘরের বাইরে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি মহিলা কলেজের পাশের কালভার্ট দিয়ে তাঁদের এলাকার পানিনিষ্কাশিত হলেও এবার তা হচ্ছে না। তাই ভোগান্তির শেষ নেই।
শহরের রশিদ কলোনি এলাকার বাসিন্দা সামছুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিন বছর আগেও পৌরসভার কর্মীরা বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ছাগল মারা খালটি পরিষ্কার করতেন। এতে গত তিন-চার বছর খুব একটা পানি জমেনি। কিন্তু এ বছর বর্ষার আগে খাল পরিষ্কার করা হয়নি। তাই শহরের বাসিন্দাদের ভোগান্তি বেড়েছে।
জানতে চাইলে নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, শহরের পানিনিষ্কাশনের মাত্র দুটি মাধ্যম। একটি হলো ছাগল মারা খাল, অন্যটি হলে সড়ক বিভাগের ড্রেন। ছাগল মারা খালটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এরপরও পৌরসভার পক্ষ থেকে সেটি পরিষ্কার করার জন্য কাজ চলছে। সড়ক বিভাগের ড্রেন পানি নামার উপযোগী করে নির্মাণ করা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে জলজট কাটাতে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।