স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে তার নিজ জেলা মানিকগঞ্জে। সদর কবরস্থানে বাদ জুমা তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।

শুক্রবার দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

এর আগে শুক্রবার ঢাকা সেনানিবাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে আসিম জাওয়াদের ফিউনারেল প্যারেড এবং দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ও বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং নৌবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে ঢাকা নৌ-অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের পরিবারের সদস্য, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্য পদবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকের প্যারেড গ্রা মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ফিউনারেল প্যারেড শেষে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মরদেহ নেওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ নেওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় দুই পাইলট প্যারাসুট নিয়ে বিমান থেকে লাফ দেন। স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে দ্রম্নত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃতু্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৩২ বছর ১ মাস ২০ দিন। তিনি স্ত্রী, এক কন্যা, এক পুত্র, বাবা-মা এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ার গোপালপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ডা. মো. আমানউলস্নাহ এবং মায়ের নাম নীলুফা আক্তার খানম। আসিম জাওয়াদ ২০০৭ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি (অ্যারো) পাস করেন।

স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন।

১২ বছর বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন আসিম : কমিশন প্রাপ্তির পর মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তার চাকরিকাল ১২ বছর ৫ মাস ৯ দিন। চাকরিকালে তিনি বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে তিনি অ্যাডজুটেন্ট ১৫ স্কোয়াড্রন বি বা, অ্যাডজুটেন্ট ৩৫ স্কোয়াড্রন বি বা, ইন্সট্রাকটর পাইলট ১১ স্কোয়াড্রন বি বা, স্টাফ ইন্সট্রাকটর-ফ্লাইং ইন্সট্রাকটরস স্কুল বি বা, ইন্সট্রাকটর পাইলট ১০৫ এজেটিইউ বি বা, কোয়ালিফাইড উইপন ইন্সট্রাকটর ২১ স্কোয়াড্রন বি বা এবং ফ্লাইট কমান্ডার (অপস) অ্যান্ড ইন্সট্রাকটর ২১ স্কোয়াড্রন বি বা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দেশে-বিদেশে পেশাদারি স্বীকৃতি লাভ করেন আসিম : স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ পেশাদারি দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ মফিজ ট্রফি‘, ‘বিমান বাহিনী প্রধান ট্রফিও বিমান বাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এ ছাড়া ভারতীয় বিমান বাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতি অর্জন করেন। চাকরিকালে দেশ-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে ওয়াটারম্যানশিপ কোর্স, বেসিক লোকাল অ্যাডমিন কোর্স, ফিজিক্যাল ফিটনেস কোর্স, জেনারেল সারভাইভাল কোর্স, অপস্‌ ইন্টেলিজেন্স কোর্স, ফরওয়ার্ড এয়ার কন্ট্রোলার কোর্স, এলিমেন্টারি সেফটি কোর্স, বেসিক জেট অ্যান্ড ফাইটার কনভার্সন কোর্স, অপস কনভার্সন কোর্স, এলিমেন্টারি লিডারশিপ কোর্স, ফ্লাইং ইনসট্রাকটরস কোর্স, ফ্লাইং সুপারভিশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স, ফিজিক্যাল ইনডকট্রিনেশন কোর্স, জুনিয়র কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কোর্স, অপস্‌ কনভার্সন কোর্স অ্যান্ড রেয়ার ককপিট ক্লিয়ারেন্স কোর্স ও ফ্লাইট লিডারশিপ কোর্স সম্পন্ন করেন। স্কোয়াড্রন লিডার আসিম বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে অ্যাভিয়েশন ইনসট্রাকটরস পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপেস্নামা সম্পন্ন করেন।

চীন ও ভারত থেকে ফাইটার কোর্স করেন স্কোয়াড্রন লিডার আসিম : এ ছাড়া তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন অ্যাভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফাইড ফ্লাইং ইন্সট্রাকটরস কোর্স সম্পন্ন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *