কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে (কুবি) নিয়ে বাংলাদেশের ৭১ টিভি নামক একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রচারিত সংবাদকে ‘মিথ্যা’ দাবি করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে প্রচারিত সংবাদগুলোকে ‘ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২১ এপ্রিল ২০২২ তারিখে ৭১ টেলিভিশনে ‘‘ব্রিটেনে ‘কালো তালিকাভূক্ত’ বাংলাদেশের পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করে। সংবাদটিতে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টসের (ইউসিএ) বাংলাদেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভূক্ত করেছে বলে তথ্য দেওয়া হয়। সংবাদটিতে মিথ্যা দাবি করা হয় যে, এই পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। এরপর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে যে, ৭১ টেলিভিশনের প্রচারিত সংবাদে The university of comillah ও Cumillah University নামে যে দুইটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে, তার কোনোটিই বাংলাদেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (comilla University) নয়।
সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন ৭১ টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন যে, Cumilla university নামে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ নয়। কারণ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বানান ‘comilla university, Cumilla university নয়। এছাড়াও তিনি গত ২১ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে ইউনিভার্সিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টসের (ইউসিএ) হেড অফ কমিউনিকেশন অ্যানি ব্রাউনের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ইউসিএ সে ইমেইলের জবাব দেয়নি।
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সোমবার ইউনিভার্সিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টসের (ইউসিএ) সাথে সরাসরি ফোনে যোগাযোগের কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের বক্তব্যের সাথে একমত পোষন করে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) বিষয়টি নিয়ে তাদের বক্তব্যে বলেছেন যে, যে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে সেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তাছাড়াও ইউজিসি তাদের বক্তব্যে আরও বলেছেন যে, ব্রিটেনের ইউনিভাসিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টসের (ইউসিএ) বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে কালো তালিকাভূক্ত করার এখতিয়ার নেই। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসির এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত।’
এছাড়া দুই পৃষ্ঠার এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭১ টিভির প্রতিবেদনের ব্যাপারে বলা হয়, ‘কিন্তু আমরা অত্যান্ত বিষ্ময় ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, আজ শনিবার ( ৩০ এপ্রিল) ৭১ টেলিভিশন ‘‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ, কিন্তু অনুসন্ধানে মিলল ‘কালো তালিকা’র সত্যতা’’ আরও একটি সংবাদ প্রচার করে। এ সংবাদটিতে নতুন কোনো তথ্য নেই, বরং ইতিপূর্বে প্রচারিত সংবাদের তথ্যসমূহ পূণরায় ব্যবহার করে আবারও cumilla university নামের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (comilla university) হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
শনিবারে প্রচারিত সংবাদের ব্যাপারে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়,
‘আজকের (৩০ এপ্রিল) প্রচারিত সংবাদটিতে প্রতিবেদক সোফিয়া ওয়াং নামে ইউসিএর একজন কর্মকর্তার ই-মেইলের বরাত দিয়েছেন। সেখানে সোফিয়া ওয়াংয়ের ইমেইলের নামে যে বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে, তাতেও The University of Comillah ও Cumilla University নামে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (Comilla University) এর কথা সোফিয়া ওয়াংয়ের ই-মেইলেও উল্লেখ নেই। তাহলে ৭১ টেলিভিশন তাদের প্রচারিত সংবাদে কিভাবে দাবি করছে যে, কালো তালিকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তির সত্যতা হয়েছে। আজকের সংবাদটি তাদের ইতিপূর্বে প্রচারিত সংবাদে প্রচারিত তথ্যের পুনরাবৃত্তি মাত্র। আমাদের বোধগম্য নয় যে, তারা কি ধরনের ‘অনুসন্ধান’ করেছে বা কিসের ‘সত্যতা’ পেয়েছে বলে দাবি করছে।’
‘এছাড়াও আজকের (৩০ এপ্রিল) প্রচারিত সংবাদে সোফিয়া ওয়াংয়ের নামে যে ইমেইলটি দেখানো হয়েছে, সেখানে সোফিয়া ওয়াংয়ের ইমেইল অ্যাড্রেস ও ফোন নম্বর ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে কী সংবাদ যুক্তি বা নৈতিকতা কাজ করেছে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। ৭১ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের কী এমন ভয় রয়েছে যে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোফিয়া ওয়াংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের মিথ্যাচার প্রকাশ হয়ে পড়বে?’
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আজকের (৩০ এপ্রিল) প্রচারিত সংবাদে কুমিল্লা জেলার ইংরেজি নামের বানান পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের বিষয়টির অবতারণা করা হয়। এ বিষয়টিও অপ্রাসঙ্গিক এবং উদ্দেশ্যমূলক। বাংলাদেশের আরেকটি জেলা চট্টগ্রামের ইংরেজি বানান Chittagong থেকে Chattogram এ পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি নাম University of Chittagong নামে অপরিবর্তিত রয়েছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, যেহেতু ৭১ টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ Cumilla University নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কালো তালিকাভূক্ত হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করছে এবং সেটিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (comilla university) হিসেবে প্রমাণ করার মিথ্যা ও অনৈতিক চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে তাদের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদকে সত্য প্রমাণ করতে হবে? তারা কি এটিই প্রত্যাশা করছেন?
ইউনিভাসিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টসের (ইউসিএ) কাছে বাংলাদেশের ১৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সহ মোট ৩৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের গ্রহণ যোগ্যতা আছে বলে ৭১ টিভির সংবাদে প্রচার করা হয়। এবং এই যুক্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে (comilla university) কালো তালিকাভুক্ত ঘোষণা করা হয় প্রতিবেদনটিতে। এ ব্যাপারে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবাদের আরেকটি অংশে প্রচার করা হয় যে, ইউনিভাসিটি ফর দ্য ক্রিয়েটিভ আর্টস (ইউসিএ) বাংলাদেশের ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণ করবে, সেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আজকের (৩০ এপ্রিল) তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫১টি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ১০৮টি। তাহলে যে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৮৯টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিএর তালিকায় নেই তারাও কালো তালিকাভূক্ত? এ তথ্যটি প্রচারের মাধ্যমে ৭১ টেলিভিশন একটি অযৌক্তিক বিষয় দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে যে, যেহেতু তালিকায় নেই সেহেতু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কালো তালিকাভূক্ত। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। তাদের এ চেষ্টাও প্রমাণ করে যে, অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে টেলিভিশন চ্যানেলটি মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে।
এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭১টেলিভিশনের প্রচারিত সংবাদটি কোন ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, ‘৭১ টেলিভিশন কোনো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বারংবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে আইনি পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত ও উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছে।’
উল্লেখ্য, ৭১ টিভি নামক বেসরকারি টেলিভিশনটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কালো তালিকায় দাবি করে ২১ এপ্রিল একটি এবং পূর্বে প্রকাশ করা সংবাদে সত্যতা যাচাই করে ৩০ এপ্রিল আরেকটি সংবাদ প্রকাশ করে। প্রথম সংবাদ প্রকাশের পর দেশ জুড়ে ৭১ টিভি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে তারা তৎক্ষণাৎ ২১ এপ্রিলে সম্প্রচার হওয়া সংবাদটি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রাইভেট করে দেয়। যা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রাইভেট অবস্থায় আছে।