পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি ফিড তৈরির মূল উপকরণ সয়াবিন মিলের রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে খাদ্যের দাম কমে যাবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
বুধবার (১৩ অক্টোবর) ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে প্রত্যাশার কথা বলা হয়। এফআইএবির সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, এ সিদ্ধান্তে খামারি, উদ্যোক্তা ও ফিড প্রস্তুতকারীদের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমরা ধন্যবাদ জানাই, দেরিতে হলেও এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য।
ব্রি সূত্র জানায়, ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত সিরিয়াল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ ফর সাউথ এশিয়া (সিএসআইএসএ III) প্রকল্পের অধীনে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগ মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েছে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহযোগিতায় ঝিনাইদহ জেলার ফুলহরি গ্রামে কৃষক মো. লিয়াকত আলীর জমিতে এ মাঠপরীক্ষা বাস্তবায়ন করা হয়।
ব্রির ট্রায়াল প্লটে ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। ব্রি কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মাহবুবুর রহমান দেওয়ান বলেন, মাঠ পরীক্ষার ফলাফলে আমরা দেখতে পেয়েছি, ২০ দিনের চারা ব্যবহার করে ১০৫ দিনেই ব্রি ধান৭৫ কাটা যায়। ফলন হেক্টরপ্রতি ৫ টনের অধিক হয়েছে। ২০ জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে পর্যন্ত এই ধানের বীজতলা বপন করা হয়।
ব্রির রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন এবং এই কর্মসূচির প্রধান গবেষক জানান, ব্রি এই জাতের সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ২০ জুলাই থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ধান বপনের সুপারিশ করে থাকে। তবে জুনের শেষে বা জুলাইয়ের প্রথম দিকে বপন করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ধান কাটার পরেও বেশ ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
এ ধান গবেষক বলেন, জাতটি অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল দীর্ঘ মেয়াদী জাতের তুলনায় আগাম উচ্চ ফলন দিতে পারে। আগাম পরিপক্কতার কারণে কৃষকরা সহজে ও সময়মত মসুর ডাল, সরিষা, ভুট্টা বা অন্যান্য উচ্চ মূল্যের শীতকালীন ফসল চাষ করতে পারেন। ফলে, এটি জাতীয় শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
এফআইএবি সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, সয়াবিন মিল রফতানির সিদ্ধান্তে দেশীয় পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি খাতের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। রফতানি বন্ধ হওয়া ও ভারতে সয়াবিন মিলের সংকট কমে যাওয়ায় সয়াবিন মিলের স্থানীয় মূল্য অবশ্যই কমবে বলে আমি আশা করি।
তিনি বলেন, রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট নয়, বরং সয়াবিন মিলের দাম পূর্বের অবস্থায় আনাও অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে ফিডের দাম কমবে না। ফলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। তাই সয়াবিন মিলের মূল্য কমানোর জন্য তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর চাপ প্রয়োগের আবেদন জানিয়েছেন পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি খামারিরা।
সয়াবিন মিল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রসঙ্গে গত ১২ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দুটি চিঠিতে বলা হয়েছে, সয়াবিন মিল রফতানি অব্যাহত থাকলে, এর প্রভাবে ডেইরি ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে ডেইরি ও পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। দেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরে বিরূপ প্রভাব পড়বে।
মূলত সে কারণেই ডেইরি ও পোল্ট্রি সেক্টরের স্বার্থ রক্ষার্থে ১৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) থেকে সয়াবিন মিল রফতানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত যেসব এলসি/টিটি সম্পন্ন হবে ওইসব পণ্য ২০ অক্টোবর তারিখের মধ্যে রফতানি করা যাবে।